আইডির মেয়াদ শেষ, শঙ্কায় কাতার প্রবাসীরা
কামরুল হাসান জনি : ৫ মাসের ছুটি কাটাতে ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর দেশে এসেছিলেন চট্টগ্রামের ফয়েজ আহমেদ। কিন্তু ফয়েজের ভাগ্যাকাশ কালো মেঘে ঢেকে দিয়েছে বৈশ্বিক মহামারি করোনার থাবা। ১৪ মাস পরও কর্মস্থলে ফেরা হয়নি তার। এদিকে গত বছরের ২৮ জুলাই শেষ হয়ে গেছে তার কাতার রেসিডেন্সি পারমিট কার্ডের মেয়াদ। তাই দেশটিতে এখন ফেরা অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তার।
এদিকে ফয়েজ আহমেদের মতো একই ভাগ্য দশায় দিন পার করছেন ছুটিতে আসা হাজারও কাতার প্রবাসী। কাতারে যেখানে প্রতিমাসে ৮০ থেকে এক লাখ টাকা আয় করতেন, তার বিপরীতে দেশে চাকরি করে এখন পনের হাজার টাকা আয় করতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে এসব প্রবাসীদের।
কাতারে বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা যায়, কাতারে কাজ করতে ভিন্ন দেশের নাগরিকদেরকে দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে সরবরাহ করা হয় এ ধরনের কার্ড। সাধারণত একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত এই কার্ড ব্যবহার করা যায়। কার্ডের মেয়াদ পেরোলেই কাতারে থাকার অনুমতি বাতিল হয়ে যায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির।
সিটিজিনিউজের সাথে কথা হয় ফয়েজ আহমেদের মতোই আরেক কাতার প্রবাসী মিজানুর রহমানের সাথে। কুমিল্লার এই বাসিন্দা জানান, কাতারের ‘কারোয়া আল মিলিয়ন’ নামে একটি গাড়ির প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন তিনি। গত বছরের ১৫ জানুয়ারি মাত্র দেড় মাসের জন্য দেশে অবকাশে এসেই আটকে গেছেন তিনি।পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হওয়ায় ছয় সদস্য নিয়ে এখন আর্থিক টানাপোড়নে দিন কাটছে তার।
রিটার্ন টিকেট করেও কাতারে ফিরতে পারেননি আরেক প্রবাসী নোয়াখালীর জাহাঙ্গীর আলম। তিনি সিটিজিনিউজের এই প্রতিবেদককে তিনি জানান, ২০১৯ সালের ২৬ ডিসেম্বর দেশে ফেরার সময় ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের রিটার্ন টিকেট করে এসেছিলাম। গত বছর ২২মে ফিরে যাবার কথা ছিলো। কিন্তু ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আর যেতে পারিনি। নভেম্বরে কাতার কর্মস্থলের আইডির মেয়াদও শেষ আমার। নতুন করে নবায়ন করতে প্রায় ২৩ হাজার টাকা লাগবে। কিন্তু আদৌ এটা করতে পারবো কি না বুঝতে পারছি না।
এদিকে ছুটিতে দেশে এসে করোনার থাবায় এলোমেলো হয়ে গেছে ময়মনসিংহের মিন্টন খানের জীবন। তিনি জানালেন, দেশে এসে ফেঁসে গেছি। গত জুলাই মাসে আইডির মেয়ার শেষ হয়ে গেছে। এমন অবস্থায় সেখানে ফিরে যেতে পারবো কি-না জানিনা। আবার পরিবার চালাতেও হিমশিম খাচ্ছি। মরার উপর খাড়ার ঘাঁ।কিছুদিন একটি অটোরিক্সা চালিয়ে যাওবা খাবার জোগাড় করেছিলাম কয়েকদিন হলো সেটিও নষ্ট হয়ে গেছে।
দেশে ছুটিতে কাটাতে এসে আটকে পড়া এসব কাতার প্রবাসীর রেসিডেন্সি পারমিটের সমস্যার সমাধানে দূতাবাসের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে কি না জানতে কাতারে বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কাউন্সিলের সাথে মুঠোফোনে বার বার যোগাযোগ করা হলেও ওপাশ থেকে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে গত ১৫ মাসে দেশ থেকে কোনো কাতার প্রবাসীই ফিরে যেতে পারেননি বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জহিরুল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, ২০২০ সালের ২ অক্টোবর থেকে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি)র ছাড়পত্র নিয়ে শাহ আমানত আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দর ব্যবহার করে কেউ কাতার যাননি। এই হিসেবে কর্মস্থলের মেয়াদোর্ত্তীণ আইডিধারী প্রবাসীরা দিনে দিনে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে পা বাড়াচ্ছেন।
কেএন