পাইলট নতুন সফটওয়্যার না বোঝায় দুর্ঘটনা; বোয়িংয়ের জরিমানা
ঈষিতা ব্রহ্ম
ঢাকা
বাণিজ্য: নুতন সফটওয়্যার যুক্ত করে পাইলটদের সঠিকভাবে প্রশিক্ষণ দেয়নি মার্কিন বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং। ছিল বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটিও। ফলে উড্ডয়নের পরই নিয়ন্ত্রণ হারান বিমান চালক। ঘটে বড় বড় দুটি দুর্ঘটনা। মার্কিন বিচার বিভাগের তদন্তে এমন প্রমাণ পাওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটিকে আড়াইশ কোটি মার্কিন ডলার জরিমানা করা হয়েছে। দায় স্বীকার করে সেটি পরিশোধে সম্মত হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
ওই তদন্তে উঠে এসেছে বিমান দুর্ঘটনা দু’টির পেছনে বোয়িং কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার দৃশ্য। তবে, এ জরিমানা দোষিদের শাস্তির হাত থেকে রক্ষার চেষ্টা বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
জরিমানার মধ্যে ১৭৭ কোটি ডলার দেয়া হবে ওই বিমানের যাত্রীদের। ৫০ কোটি ডলার দেয়া হবে বিমান দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত যাত্রীর পরিবারের সদস্যদের। দুটি বিমান দুর্ঘটনা এবং প্রাণহানির পর প্রায় ২০ মাস বন্ধ ছিলো বোয়িংয়ের সেভেন থ্রি সেভেন ম্যাক্স মডেলের বিমান চলাচল। দুর্ঘটনার তদন্তে উঠে আসে, গাফিলতি এবং তথ্য গোপন করার সত্যতা।
কি তথ্য গোপন করেছিলো বোয়িং?
ইন্দোনেশিয়ার বিমান লায়ন এয়ারের ফ্লাইট ৬১০ এবং ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ৩০২ শিকার হয় দুর্ঘটনার। নতুন সফটওয়্যার সম্পর্কে অবগত ছিলো না এফএফএ। ছিলো পরিবর্তন। ত্রুটিও ছিলো সফটওয়্যারে, যে কারণে উড্ডয়নের পরপরই পাইলটদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় বিমানগুলো। বোয়িং দুর্ঘটনার জন্য সাবেক কর্মকর্তাদের দোষারোপ করলেও ফেডারেল এভিয়েশন এডমিনিস্ট্রেশনের তদন্তে উঠে আসে, পাইলটরা সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত ছিলো না।
২০১৬ সালে যখন বিমানটি তৈরি হয় তখনই দুর্নীতির সাথে জড়িত ছিলো বোয়িংয়ের দুই কর্মকর্তা। ২০১৮ সালে বিমানটি যখন অনুমোদন দেয়া হয় উড্ডয়নের জন্য, তখনও ওই কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। তাদের নাম মার্ক ফর্কনার ও প্যাট্রিক গুস্তাভসন। এরপরই দুটি বিমান দুর্ঘটনা ঘটে।
বোয়িংয়ের প্রধান নির্বাহী ডেভ কালহওন বলেন, এই ক্ষতিপূরণ পরিশোধের মাধ্যমে প্রমাণিত হচ্ছে বোয়িং নীতিনির্ধারণ আর যাত্রী নিরাপত্তার বিষয়ে কতোখানি কঠোর। কিন্তু এই ক্ষতিপূরণে মোটেও খুশি নন ভুক্তভুগীরা। তারা বলছেন, সরকার জানে কারা এই অপকর্ম করেছে। এটা মেকি চুক্তি, সরকার দোষীদের রক্ষা করছে।
ফেডারেল এভিয়েশন এডমিনিস্ট্রেশনের প্রধান স্টিভ ডিকসন বলেন, ফেডারেল এভিয়েশন এডমিনিস্ট্রেশন এ বিমানকে যাত্রীসহ উড্ডয়নের অনুমতি ততোদিন পর্যন্ত দেবে না, যতোদিন না বোয়িং যাত্রী পরিবহনে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে। পাশাপাশি ইথিওপিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় বিমান দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য কিছু করার নির্দেশ দেয় এফএফএ। ওই দুর্ঘটনায় ৩৪৬ জন মানুষের প্রাণহানি হয়েছিলো।
বোয়িং ক্ষতিপূরণ দিতে সম্মত হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে স্টিভ ডিকসন বলেন, যারা মারা গেছেন দুর্ঘটনায়, তাদের পরিবারের সদস্যদের সামনে কথা বলার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
এ ধরনের দুর্ঘটনা ভবিষ্যতে যেন কখনো না ঘটে, সে বিষয়ে বোয়িংকে প্রতিশ্রুতি দেয়ার আহ্বান জানান তিনি। বিমান দুর্ঘটনার পর থেকে এখন পর্যন্ত ২ হাজার কোটি ডলারের লোকসান গুণেছে বোয়িং। ২০২০ সালে বোয়িংয়ের ১ হাজার অর্ডার বাতিল হয় যার বেশিরভাগই ম্যাক্স মডেলের।
এমকে